এম জসীম উদ্দিন::বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুথ্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা বিগত এক মাসে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার পাশাপাশি সেগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং কার্যাবলির প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। বিটিআরসির সহায়তায় ICT Division-এর ফেইসবুক পেইজ পুনরূদ্ধার করার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইট পুনর্বিন্যাস ও হালনাগাদ করা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকল্পসমূহের মূল্যায়ন বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও দুইটি সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর বাইরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইসিটি অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশ সাধনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অন্যতম কাজ হলো আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারও প্রয়োগ করে দেশকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতার জাতীয় আধার হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি সেবা ও শিল্পখাতকে জ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ এবং কারিগরি সেবা প্রদান করে থাকে। ন্যাশানাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার ও ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক নির্মাণ ও তা কার্যকর করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত মান ও স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করা, সফটওয়্যার টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন, জাতীয় ডাটাসেন্টার, পাবলিক সি এ, নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার, সিকিউরিটি অপারেশান সেন্টার পরিচালনা এবং ডাটা সেন্টার হতে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা হয়। ডিজিটাল ফরেনসিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্নখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারিক কাঠামোর উন্নয়ন করা কম্পিউটার কাউসিলের অন্যতম লক্ষ্য। তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পেশাগতমান উন্নয়ন করা, আইটি স্কিল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি এবং আইটি/আইটিইএস শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং এতদসংক্রান্ত নীতি ও কৌশল প্রণয়নে অ্যাসোসিয়েশনসমূহ ও সরকারকে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় শিক্ষা ও দক্ষতার বিশ্বমান নিশ্চিত করা, নব্য স্নাতকদের নিয়োগ যোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কিল গ্যাপ পূরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকগণকে উপযোগী করে গড়ে তোলায় হলো একমাত্র লক্ষ্য। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় কৌশল ও নীতি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি এবং দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহিত যোগাযোগ স্থাপন ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। সরকারের সকল সেক্টরের ডিজিটাইজেশান এর ব্যবস্থা করা এবং পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারির জন্য উচ্চগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা করা হয়। উক্ত নেটওয়ার্কে নিরাপদ তথ্যপ্রবাহ ও সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, সরকারের সকল অফিসে আইসিটি অডিট ব্যবস্থা প্রবর্তনে সহায়তা করা, উর্পযুক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কম্পিউটা কাউন্সিলের ইনটেলিজেন্স কাজকে আরও সহজ করার জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার টেস্টিং সংক্রান্ত ৫টি সফটওয়্যার এবং ৮৩টি হার্ডওয়্যার টেস্টিং সম্পন্ন করা হয়েছে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বলতে সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইসের নিরাপত্তা তথ্যকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করা এবং বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ রাখাকে বুঝায়। এরই মধ্যে ৩৬৫ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ICT প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৪টি প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার সেবা প্রদান এবং জাতীয় ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে ৭৭৮টি সাপোর্ট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তার ৫৫টি কার্যক্রমের মধ্যে ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রদান এবং সার্টিফাইং অথোরিটি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ২৯টি স্টার্টআপকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের আওতায় ২১২৫টি ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে। ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি) প্রকল্পের আওতায় ১৯৫৪টি প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ৩টি দরপত্র আহ্বান, ৫টি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ইন্টারনেটে আমরা যে সার্ভিসই ব্যবহার করিনা কেন, তা সাধারণত পরিচালিত হয় একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে, আর এই কেন্দ্রীয় অবস্থানটির নাম হলো ডাটা সেন্টার । ডাটা সেন্টার হলো ইন্টানেটের একটি নির্দিষ্ট স্টেশন। যেসব স্টেশন থেকে আমাদের কাছে ডাটা সার্ভ করা হয়। এখানে একেকটি ডাটাকে বিভিন্ন রূপ প্রদান করা হয়, ডাটাকে প্রসেস করে কন্ট্রোল করা হয়। একটা নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে নানা জায়গায় পরিবহণ করানো হয়। এতে ডাটা সেন্টারের সবগুলো কম্পিউটার আবার যুক্ত থাকে একটি প্রধান কম্পিউটারের সাথে।
ডাটা সেন্টার হলো একটা অবকাঠামো। এই অবকাঠামোটি গঠিত হয় শক্তিশালী কম্পিউটার তথা সার্ভারের সমষ্টি নিয়ে। এখানে অনেকগুলো সার্ভার নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া ডাটা গ্রহণ করে, তা প্রসেস করে এবং কন্ট্রোল করে তা আবার গ্রাহক পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়। ডাটা সেন্টারগুলোর এই একই কাজ দিনরাত সবসময় করে থাকে। ডাটা সেন্টার এর চিত্র হয় সাধারণত বিশাল একটা রুমে বা বিল্ডিংয়ে। প্রত্যেকটি সার্ভার একই নেটওয়ার্কের সাথে পরস্পর যুক্ত থাকে। সার্ভারগুলো খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়। এসব ডাটা সেন্টারে একেকটি সার্ভার সমন্বিতভাবে সকল কাজ হ্যান্ডেল করে, গ্রাহক পর্যায় থেকে ডাটা সংগ্রহ করে তা প্রসেস করে একটি বোধগম্য ডাটা হয়ে গ্রাহক পর্যায়ে পৌছে দেয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব ডাটা সেন্টারের ওপর নির্ভর করে। ৭ হাজার অফিসের ডাটা DRCC তে ইতোমধ্যে মাইগ্রেশন করা হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর পক্ষ থেকে গত এক মাসে কোম্পানিতে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে তার মধ্যে ৪০টির বেশি স্টার্টআপের সাথে সভায় ইকোসিস্টেম উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। “ফান্ড অব ফান্ডস” চালুর জন্য JICA-এর সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত হয় নতুন এক বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর, জনগণ নতুন করে পায় অন্তবর্তীকালীন সরকার। আর এই অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রশাসনিক কাঠামো থেকে শুরু করে সকল সেক্টরে সংস্কার করে যাচ্ছে। যা জনগণের বহুদিনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এর নির্দেশনায় এ সংস্কার কাজ হচ্ছে। সংস্কার কার্যক্রমের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (পিআইডি ফিচার)