সিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিলেট নগরীতে কয়েক কোটি টাকার মৌরসী সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টাকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ হাবিবুর রহমান শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারই আপন ভাতিজি অ্যাডভোকেট সৈয়দা তাহমিনা রহমানের।
এ ইস্যুতে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তাহমিনা রহমান বলেন, নগরীর উপশহর সৈদানীবাগ উন্মেষ ২০ বাসার মৃত সৈয়দ মুহিবুর রহমান শরীফের একমাত্র মেয়ে তিনি। তার দুই চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ হাবিবুর রহমান শফীক ও সৈয়দ আতাউর রহমান শাহীন। দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছর আগে থেকে তারা একসাথে তার বাবা-চাচারা মৌরসী সম্পত্তিতে বসবাস ও ভোগদখল করে আসছেন। মৌরসী ভূমি ছাড়াও খরিদসূত্রেও জায়গার মালিক ও ভোগদখলে আছেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার আপন চাচা মৌরসী সম্পত্তির তার বাবার অংশ বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।
নগরীর মধুবন মার্কেটে দোকানটি তার বাবা সৈয়দ মুহিবুর রহমানের। জীবদ্দশায় সৌদি আরবে থাকাকালে দোকানটি খরিদ করার জন্য বড় ফুফুর কাছে ১১ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। ওই টাকায় দোকানটি ক্রয় করা হয়। এই দোকান চাচার টাকায় কেনা হয়নি। বরং চক্রান্ত করে দোকানের কাগজাদিতে সুকৌশলে তিনিসহ তার অপর ভাইয়ের নাম অন্তর্ভূক্ত করিয়ে নেন। অথছ মধুবন মার্কেটের দোকানের একমাত্র মালিক তার মরহুম বাবা। জীবদ্দশায় এই দোকানে দীর্ঘদিন ব্যবসাও করে গেছেন। তার বাবাকে ব্যবসার সুবাধে কোন টাকা দেননি বলেও দাবি তাহমিনার।
তাছাড়া তার চাচা সৈয়দ হাবিবুর রহমান গোপনে যোগাযোগী মূলে ৫টি দলিল সম্পাদন করিয়ে নেন। এর পূথক খতিয়ানও সৃজন করিয়েছেন। উক্ত নালিশা ভূমির দাগ নং-৪৮৬, ৪৮৭, ৪৮৮। উক্ত দাগের ভূমি তার মা ও ভাইয়েরা বর্তমানে ভোগ দখলে আছেন।
তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে দায়িত্ব পালনে তার চাচা লাখ লাখ টাকা দেওয়ার মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য গণমাধ্যমে দিয়েছেন। একান্তবর্তী পরিবারের কর্তা হিসেবে তার পিতার ন্যায় তাঁরও অবদান আছে। কিন্তু মৌরুসী ও খরিদা সম্পত্তি রক্ষার্থে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার বাবা বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা লড়ে গেছেন দাবি করেন তাহমিনা। উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে রয়েছে- স্বত্ব মোকদ্দমা (নং ২০/১৯), ৬২/৯২,২১/৯৭ ও ১৭৭/২০০০)। এসব মামলা ঘাটতে গিয়ে তার বাবা তার জীবনের সর্বস্ব বিলীন করে দিয়েছেন।
এছাড়া তার বাবা ব্যবসা করে সিলেট সদরের পীরেরবাজারে ৬ একরের ভূমি খরিদ করেন। তার বাবা-চাচারা ৩ জন ওই ভূমির মালিক ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে সৈয়দ হাবিবুর রহমান শফিকসহ তার দুই চাচা তাদের অংশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল’র কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু তিনি আমার মরহুমপিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন দোকানের ব্যবসার টাকা দিয়ে বাঘা, পীরবাজার, সালুটিকর, কুমারগাঁওয়ে জমি কিনেছেন, এটা কেবল বানোয়াট-ই নয়, ভিত্তিহীন। বাড়ির পেছনে ৬টি ভাড়াটিয়া ঘর নির্মাণ করেন তার বাবা। পরবর্তীতে তার ভাই সাব্বির এগুলো সংস্কার করে। তার চাচা শফিক বাড়ীর পেছনের ৬টি ভাড়াটিয়া ঘর নির্মাণের সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন দাবি করেন তিনি। তাছাড়া মৌরসী সম্পত্তির মালিক আমরা, অথচ তার দাবি ২০১৮ সালের আপোষ-ভাটোয়ারার পরও আমরা তার ঘরে বসবাস করছি। এই ঘরটির ৬টি রুম ব্যতীত সম্পূর্ণ ঘরটি তার বাবার হাতে নির্মিত। ৩ তলা বিশিষ্ট ঘরে ১৭টি কক্ষ আছে। ২০১৮ সালে যে আপোষ-ভাটোয়ারায় শর্ত ছিল তিনি তার পিতার বসতঘরটি নিলে অনুরূপ ৩ বেডরুমের ১ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মান করে দিবেন। এটা না করে এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় তিনি মৌরসী ভূমির দখল নিতে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাহমিনা আরও বলেন, তার ভাই সাব্বিরে পিতার নায্য অংশ তাকে সমঝে দেয়ার পরও অতিরিক্ত কিছু জমি ভাতিজাকে স্বেচ্ছায় দেওয়ার মিথ্যা গল্প সাজিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে কেবল বাবার নায্য অংশ আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। তাদের নায্যা দাবি মৌরসী বাটোয়ারার ঘর তার ভাগে পড়ায় বিকল্প হিসেবে তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা। সেটাকে চাঁদাবাজির ঘটনা সাজিয়েছেন তিনি। উপরন্তু ঘরে থাকা ভাড়াটিয়াদের যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় জানুয়ারিতে ঘর ছাড়ার নোটিশ দেন। আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে ৫৩ লাখ টাকা দাবির বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই, প্রকৃতপক্ষে ইংল্যান্ড থেকে আসার তিনদিন আগে তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আসার সপ্তাহখানেক পর তিনি খরিদদারসহ তার অংশ দেখাতে বাড়িতে আসেন। এতে কেউ কোন বাধা দেয়নি। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বললে হাতে সময় নেই, টাকা দিয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তার চাচা। তখন ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঘর নির্মাণের খরচাদি সম্পর্কে অবগত করলে ২-৩ দিনের সময় দিতে বলেন তার চাচা শফিক। এতে সম্মত হলেও গোপনে তিনি তাদের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরী ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন করেন।
বর্তমানে তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে সত্ত্ব ১৯/১৬ এবং মহামন্য হাইকোর্টের সিভিলি রিভিশন ৪১৪৫/২০১৮ ইংরেজি মামলার স্থিতাবস্থার আদেশ এবং এডিসি রাজস্ব কোর্ট নামজারি বাতিল (মামলা নং-১১/’২৪) বাদি শামীম আহমদ, বিবাদী হাবিবুর রহমান শফিক মামলাটি বিচারাধীন আছে। যা তিনি গোপন করে এই সম্পত্তির অংশ বিক্রির পায়তারার চেষ্টা করছেন।
এছাড়া এলাকার ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জবর-দখলসহ একাধিক মামলার আসামি মালেক ইতিপূর্বে জেল খেটেছে। তার ভাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। যার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী (নং-১০৯৩/’২৩) ও সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারাধীন। ভূমির দখল নিতে মালেকসহ অপরাধীরা তার চাচা পক্ষে কাজ করছে। যে কারণে তারা ভীতসন্ত্রস্ত রয়েছেন।
পেশায় আইনজীবী তাহমিনা বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অথচ আপন চাচা কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও আপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এর পেছনে ইন্দন তারা যোগাচ্ছে, সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। এ জন্য প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চাচা মামুনুর রহমান সোহেল ও মাহমুদা করীর শবনম।