সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :দিনাজপুর: বিয়ের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। লাল শাড়িতে বউ সেজে বসে আছে রিয়া (১২)। বরসহ বরের বাড়ির লোকজনও চলে এসেছে। একটু পরই শুরু হবে বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু তার আগেই বিয়ের আসরে হাজির হন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিমেষেই পাল্টে যায় বিয়ে বাড়ির উৎসবের আমেজ।গ্রেপ্তার করা হয় বর, বরযাত্রী, ঘটকসহ কনের বাবাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌর এলাকার ধরন্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।পরে রাতেই কনের বাবা রাজু আহমেদ এবং ঘটক ইলিয়াছ আলীকে একমাস করে বিনাশ্রম কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার তাদের কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি আরো জানান, বর ও বরযাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।কনের বাবা রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক হয়নি। আমার মতো কোনো বাবা যেন তাদের নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে না দেয়।’উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকার ধরন্দা গ্রামের রাজু আহমেদের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে রিয়ার সঙ্গে পাবনার আতাইকুলা উপজেলার বড়ইবাড়িয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে আলমগীর হোসেনের (১৫) বিয়ের দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে বরযাত্রীরা পাবনা থেকে মাইক্রোবাসে করে আসে কনের বাড়িতে।সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে প্রশাসন গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দোষীদের শাস্তি দেন। অল্প বয়সে রিয়াকে বিয়ে না দেওয়ার জন্য এর আগেও প্রশাসন থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানান ইউএনও।উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রীতা লস্কর জানান, গত ২৮ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের উদ্যোগে বাংলাহিলি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও মাদকবিরোধী সমাবেশ চলছিল।
এ সময় এক শিক্ষার্থী জানায়, তার বান্ধবী রিয়াকে পরিবার জোর করে বাল্যবিবাহ দিচ্ছে। তখন ইউএনও, থানার ওসি, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলুসহ কয়েকজন সাংবাদিক রিয়ার বাড়িতে যান। সেখানে রিয়াকে বিয়ে না দিয়ে লেখাপড়া করানোর জন্য পরামর্শ দেন তাঁরা এবং রিয়াকে স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়ে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু রিয়ার বাবা রাজু আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার রিয়াকে গোপনে পাবনায় বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেন।