১. আমি নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবো ।
২. সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বজনিন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। নগরের উন্নয়নে করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। নগর উন্নয়নে স্থায়ী কমিটিগুলোর সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হবে। বর্তমান যে নগর ভবন রয়েছে এটিকে একটি বহুতল বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন ছাড়া কিছুই মনে হয় না। ভনটিতে কোনো স্থাপত্য ঐতিহ্য নেই। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন নগর ভবনে রূপান্তর করব।
৩. বর্তমানে ৪২টি ওয়ার্ড নিয়েই সিলেট নগর। তাই নগরের উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড থেকেই শুরু করতে হবে। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে এই কমিটি কাজ করবে।
৪. নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। যদিও একজন মেয়র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু তাকে অন্তত সামনের ১০০ বছর মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হয়। যাতে নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে পারেন। আমি সেটাই করতে চাই। সিলেট একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বুদ্ধির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদানে যথাযথভাবে তৈরি করা হচ্ছে কি-না সেট কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হবে।
৫. সিলেট নগর এখন অনেক বড়। বিশেষ করে নতুন যে ওয়ার্ডগুলো হয়েছে সেগুলোতে অনেক সমস্যা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই প্রথমেই নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে। নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
৬. সিলেট নগরের একটি বড় সমস্যা পানীয় জলের সমস্যা। এই সমস্যা এখন আরও প্রকট হবে কারণ আয়তন বেড়েছে। তাই এই সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে। এক বছর আগে বলা হয়েছিল সিলেট ওয়াসা গঠন করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো নাম-গন্ধই নেই। সুতরাং ওয়াসার আশায় বসে থাকলে হবে না। সিটি
করপোরেশনকেই সমস্যা সমাধান করতে হবে। এবং এটা আমি অবশ্যই করব।
৭. সিলেট নগরের অরেকটি বড় সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। মহানগরে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমছে। কিন্তু এগুলো অপসারণের সক্ষমতা নেই সিটি করপোরেশনের। আমি নির্বাচিত হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি প্রকল্প হাতে নেবো। বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করব। এছাড়া অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য আলাদা প্ল্যান্ট স্থাপন করে এগুলোকে রিসাইক্লিং করে গৃহস্থালী পণ্য তৈরির ব্যবস্থা করব। যা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এটা বাড়িয়ে বলা নয়, এটা সম্ভব। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন গত মাসে জাপানে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন যেটি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি। সুতরাং সবই সম্ভব—শুধু প্রয়োজন উদ্যোগ।
৮. সিলেট নগরের আরেকটি বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে। নগরের খাল ও ছড়া পুনঃখননের ব্যবস্থা করা হবে। সুরমা নদী খননের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সরকার যাতে সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নেয় তার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করবে।
৯. সিলেট একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। সিলেট নগরেও অনেক প্রবাসী রয়েছেন। প্রবাসীরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই নাগরিক সেবার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রবাসীরা যাতে অগ্রাধিকার পান সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের জন্য আলাদা সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১০. সিলেট নগর কোনোভাবেই শিশুবান্ধব নয়। নগরীতে শিশু পার্ক নেই বললেই চলে। ওসমানী শিশু পার্ক নামে একটির অস্থিত্ব থাকলেও সেটি বাণিজ্যিক এবং এর সুফল শিশুরা পাচ্ছে না। দক্ষিণ সুরমায় সম্প্রতি একটি চালু হলেও সেটিরও একই অবস্থা। তাই আমি নির্বাচিত হলে শিশু পার্ক নির্মাণসহ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবো। একসময় সিলেট ছিল ছিল দিঘীর নগরী। এখন দিঘী নেই বললেই চলে। যেগুলো আছে সেগুলো সংস্কার করব। অবৈধ দখলে থাকলে সেগুলো উদ্ধার করব।
১১. সিটি করপোরেশনের কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
১২. বর্তমান সময়ে কারিগরী শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই সিটি করপোরেশনে উদ্যোগে একাধিক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। যেখানে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার অভাবে নগরে কিশোর গ্যাং বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাদের পুনর্বাসন এবং কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১৩. সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে একটি আধুনিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। একসময় সিলেট পৌর পাঠাগার ছিল। সেখানে অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ ছিল। এখন এই পাঠাগারের অস্থিত্বই নেই। এটা চালু করা হবে। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সমূহকে সবধরণের সহায়তা দেওয়া হবে ।
১৪. সিলেট নগরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু কর্মজীবী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই তাদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে।
১৫. সিলেট নগরীকে আধ্যাত্মিক নগরী বলা হয়। এছাড়া সিলেট রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরও। এই সম্প্রীতি সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অভ্যন্তরে এ ধরণের একটি স্থাপনার কথা থাকলেও কার্যত তা করা হয়নি। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল’র ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
সিলেট পোস্ট ২৪ ডট কম
: জুন ১৮, ২০২৩ | ৮:০৯ অপরাহ্ন
« « পূর্ববর্তী
পরবর্তী » »