ঢাকা: দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অবস্থানের বিষয়ে গণমাধ্যমসহ সবাইকে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম করে দেয়া বক্তব্যে বিভ্রান্তি দেখা দেওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান কিংবা পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানের কোনো ফেসবুক আইডি নেই।সুতরাং তাদের নামে যেসব বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।একই সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম করে ই-মেইল আইডি খুলে দল ও জোটের যে অবস্থান প্রচার করা হচ্ছে, তার ব্যাপারেও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।এসব ঘটনাকে বিএনপি ও তাদের শরিক দলগুলো আন্দোলন নস্যাতে ‘সরকারি ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের অভিযোগ, সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন, নিরাপদ জায়গা থেকে বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসূচি দিচ্ছেন। সেই কৌশলেরই সুযোগ নিয়ে একটি মহল বিএনপি জোটের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
প্রমাণ হিসেবে বিএনপি দুটি ঘটনাকে তুলে ধরেছে। এর একটি হলো- গত সপ্তাহের সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা নয় মিনিটে info@bnpbd.org ই-মেইল আইডি থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নামে একটি ভুয়া বিবৃতি পাঠানো হয়।বিএনপির দাবি, ওই নামে বিএনপির কোনো ই-মেইল আইডি নেই। বিএনপির অফিসিয়াল প্যাডে যে ই-মেইল আইডি দেয়া থাকে সেটি এবং bnpcentral14@gmail.com, bnpcentral@gmail.com, bnpcpo@gmail.com- আইডি থেকে যাওয়া বক্তব্য-বিবৃতিই সত্যিকার অর্থে তাদের অবস্থান নির্দেশ করবে।এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান আরটিএনএন- কে বলেন, ‘মেজর হাফিজ উদ্দিন তার বনানীর বাসায় থাকতে পারছেন না। ওখানে পুলিশ নিয়মিত তল্লাশি করছে। তিনি সব সময় জানিয়েছেন- বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহায়তায় তা পাঠাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে মেজর হাফিজ উদ্দিন কয়েকবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তা প্রকাশ্যেই। সুতরাং তার নামে পাঠানো ই-মেইল ভুয়া এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য একটি মহল পাঠিয়েছে। এটি গভীর ষড়যন্ত্র।’
শায়রুল কবির উপরোক্ত ই-মেইল ছাড়া অন্য কোনো ই-মেইল থেকে কোনো নেতার বক্তব্য-বিবৃতি বা কর্মসূচি গণমাধ্যমে পাঠানো হলে সেটি বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ করেছেন।
ওই একই ই-মেইল থেকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নামে আরো একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়, সেটিও ভুয়া। পরে বিএনপি বিষয়টি জানতে পেরে আরেকটি ই-মেইল পাঠান এবং সেখানে সালাহ উদ্দিন আহমেদের প্রকৃত স্বাক্ষর সংযুক্ত করে দেখান যে, আগের বিবৃতিটি ভুয়া।
এছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর একটি বার্তার মাধ্যমে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহল কবির রিজভী আহমেদকে ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’ বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু পরে সে ভুল ভাঙেন রিজভী নিজে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘কোনো কোনো গণমাধ্যমে আমাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক।’
এসব বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এখন অস্থির সময় চলছে, এটা ঠিক। কিন্তু যে কৌশলে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তা মূলত কোনো সিভিল ওয়ারের ক্ষেত্রে শত্রু পক্ষকে ঘায়েল বা তাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এখানেও একটি মহল বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে শত্রুপক্ষ বেছে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিন্দনীয়। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কুচক্রী মহলের এই অপচেষ্টা সফল হতে দেয়া যাবে না।’