সিলেট পোস্ট রিপোর্ট : ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের সুরমা নদীর উপর নির্মিত কাজির বাজার সেতুর উদ্বোধন ও বিমানবন্দর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ জাতীয়
মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন তিনি। সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদিন। ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সিলেটের সাথে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠান স্থায়ী ছিল।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সিলেট বিভাগ বাস্তবায়নসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আমরা করে দিয়েছি। এখন লন্ডন থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেটে অবতরণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা কাজে প্রমাণ হচ্ছে। সিলেটসহ সারা দেশের টেকসই উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আন্তরিক রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
পরে তিনি ঘোষণার মাধ্যমে কাজির বাজার সেতু উদ্বোধন ও ভোলাগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে সিলেট ১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে থাকায় তিনি একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। প্রধানমন্ত্রী তার ভিডিও বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানান।
ভিডিও বার্তায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বহুল প্রত্যাশিত কাজির বাজার সেতুটি আমার নির্বাচনি এলাকায় নির্মিত হয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় থাকতে পারছি না। তবে বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি উদ্বোধন হওয়ায় আমি আনন্দিত।
শুরুতে অপরিকল্পিতভাবে কাজিরবাজার সেতুর কাজ শুরু হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি সুরমা নদীতে নান্দনিক ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
কাজির বাজার সেতুর উদ্বোধন: সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় কাজির বাজার নামকস্থানে সুরমা নদীর উপর ১৮৯ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত ‘কাজির বাজার পিসি গার্ডার সেতু’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের এপ্রিলে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। কিন্তু পরিকল্পনা ও ডিজাইন ছাড়া কাজ শুরু হওয়ায় কিছুদিন পরেই থেমে যায় সেতুটির নির্মাণ কাজ। এক পর্যায়ে এটা পরিত্যাক্ত সেতুতে পরিণত হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন ডিজাইন ও প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে পুণরায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজ সিলেটবাসীর এই কাঙ্খিত সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করেছে।
৩শ’ ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮ দশমিক ৯০ মিটার প্রস্তের (উভয় পার্শ্বে) এই সেতুর শহরের প্রান্তে ২৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ৬৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের সাথে সংযুক্ত সিলেট বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-লালবাগ সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলগঞ্জ সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নয়নের লক্ষ্যে একনেকে অনুমোদিত এই প্রকল্পর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৭ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় ৪শ’ ৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পে ৩১ দশমিক ৭৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কে ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টে ১৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ও রিজিড পেভমেন্টে নির্মাণ হবে ১৩ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা। এছাড়া ১টি সেতু ও ২টি কালভার্ট, ২৯ হাজার ৩শ’ ৫২ বর্গমিটার সারফেস ড্রেন নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।