সিলেট পোস্ট ডেস্ক :১৯৯৭ টু ২০১৫। ওই সময় (’৯৭) সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরাজয় ছিল ৩-০ গোলের। প্রতিপক্ষ ভারত। এই সময় (’১৫) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪-০ গোলের পরাজয়! পৃথিবী নাকি অনেকটা এগিয়ে গেছে। দেশের ক্রিকেট দেখে সেটা অবশ্য অনুমান করা যায়। তাহলে ফুটবলের কেন এমন দশা? চলুন উত্তর খোঁজা যাক।
ডি-ক্রুইফের কোচিং আমলে অস্ট্রেলিয়া থেকে পাঁচ গোল হজম করে আসে বাংলাদেশ। শুরুতে তার কোচিংয়ে কিছুটা আলো খুঁজে পাওয়া গেলেও, দিনের সঙ্গে সে আলো নিভে যেতে থাকে। অতএব তাকে হটানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। তড়িঘড়ি করে আনা হল ইতালিয়ান কোচ ফ্যাবিও লোপেজকে। দর্শন ভালো ছিল লোকটার। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। ক্রুইফ তো নিয়মিত পজিশনে ছেলেদের খেলিয়ে ফল পাননি, তাই লোপেজ ‘অন্য কিছু’ করতে চেয়েছিলেন। মামুনুলসহ কয়েকজনের পজিশন পাল্টে দিলেন। তাতে কাজ কী হল, সেটা বোঝা গেল না। তবে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু গোল খায়নি বাংলাদেশ; এটা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। লোপেজের ‘উল্টা-পাল্টা কাজ’ দেখে মন ভরেনি বাফুফের। তাকেও হটানো হল। এবার কে আসবেন? চিন্তায় পড়লেন কর্তারা। ভেবে দেখা হল, সাফ যেহেতু নিকটে। তাই এমন একজনকে দরকার, যিনি ফুটবলারদের ভালো করে চেনেন। অর্থাৎ এসেই যেন তাকে অচেনা পরিবেশে পড়তে না হয়। ওদিকে খবর এল, দেশের ছেলে মারুফুল হক উয়েফার কোচিং লাইসেন্স পেয়েছেন। তাহলে ওকেই ডাকো। ব্যস, যে কথা সেই কাজ। অন্ধকার সামনে রেখে দুর্বল লাইট ধরিয়ে দেয়া হল মারুফুলের হাতে। অভিষেক ম্যাচেই লাইটের চার্জ ফুরিয়ে গেল। এখন সেই কোটি টাকার প্রশ্ন-প্রথম ম্যাচে কী করতে পারতেন ওই মারুফুল?
মারুফুল যেটা করতে পারতেন সেটা হল শতভাগ ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলা। সেটা করতে গেলে ‘গেল গেল রব’ উঠে যেতে। কেননা এই মারুফুল ঘরোয়া লিগে নাকি অতি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলান ক্লাব দলকে। এই ‘বদনাম’ তার বিরুদ্ধে শোনা যায় হরহামেশা। গতকাল ম্যাচ হারার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, তার দল রক্ষণাত্মক পজিশন নেয়নি! চারজন ডিফেন্ডার নিয়ে মাঠে নেমেও তিনি বলছেন তার ছেলেরা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেনি।
তাহলে কী বলতে পারতেন মারুফুল?
সামনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ছেলেদের মানসিক অবস্থা ধরে রাখতে কোচকে এ ধরনের কথা বলতেই হয়। মারুফুল সেটাই বলেছেন। এবার ছোটো জামার একটা উদাহরণ দেয়া যক। আপনি যদি ছোটো জামা পরেন, তাহলে উপরে ঢাকতে গেলে নিচে খালি হয়ে যাবে। আর নিচে ঢাকতে গেলে, উপরটা আদুল হয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই দলটার অবস্থা এখন ঠিক এমন।
আফগানিস্তান এদিন দুইটা ফরওয়ার্ড নিয়ে মাঠে নামে। বাংলাদেশের কোনো ফরওয়ার্ডই ছিল না। আক্রমণভাগে সবেধন নীলমণি ওই রনি। যিনি স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে তাকে বল দিবে কে বা কারা? একজন স্ট্রাইকার নিয়ে খেললে আপনার দুই উইং হতে হবে শক্তিশালী। পরিশ্রমী। যারা একই সঙ্গে নিচে নামবে আবার উপরে উঠে ফরওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করবে। মারুফুল এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন হেমন্ত এবং জাহিদকে। কিন্তু দুই সাইডে দুজনকে শুধু ছোটাছুটিই করতে দেখা গেল। হেমন্ত-জাহিদকে দেখে মনে হল, এই দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের ফিটনেস ওই লেভেলে ছিল না। তাহলে দুইজন নিয়মিত ফরওয়ার্ড নামানো যেতে কি? হ্যাঁ যেত। তাহলে ডিফেন্স লাইন থেকে দুইজনকে বসিয়ে দিতে হতো। সেক্ষেত্রে রক্ষণ দুর্বল হয়ে যেত। গোল হতে পারত গোটা দশেক। তাহলে আর কী করা যেত?
মামুনুল-সোহেল রানাকে মাঝমাঠের বেশ উপরে খেলতে হতো। ডিফেন্সের পজিশন হতো ‘হাই-লাইন’। তাতে মামুনুল আর সোহেল রনিকে বেশি বল দিতে পারতেন। এটা করতে গেলে মাঝমাঠের তৃতীয় খেলোয়াড় মোনায়েম রাজুর উপর চাপ বাড়ত দ্বিগুণ। হাঁপিয়ে মরতেন। গতকাল যাকে বলে যেতে দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকবারের জন্য। প্রথমার্ধে দল বাজে খেললে কোচরা সাধারণত দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন কৌশল নেন। যাকে বলে প্লান ‘বি’। গতকাল তিন গোল হজম করার পর মারুফুলও সেটা করতে পারতেন। হয়তো আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের কোচ হলে তিনি সেটাই করতেন। কিন্তু এটা যে বাংলাদেশ। তাই মারুফুলকে দ্বিতীয়ার্ধেও একই কৌশলে স্থির থাকতে দেখা যায়।
তাহলে মারুফুল আর কী করতে পারতেন? কী আর করবেন। জামা যদি ছোটো হয় তাহলে কীইবা করার থাকে!