সিলেট পোস্ট রিপোর্ট : আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এ দিনে পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। আসলে দুখু মিয়া ছিলেন বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক। কবির বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম ছিল জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। : জাতীয় কবির ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কবির জন্মবার্ষিকীর দিনটি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় উদযাপন করবে। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে কুমিল্লায়। কুমিল্লার টাউন হল চত্বরে আজ সোমবার বিকাল ৪টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কুমিল্লায় নজরুল’লের প্রেম, বিয়ে-বিচ্ছেদ, গ্রেফতার, সমাবেশ এবং কাব্য ও সংস্কৃতিচর্চাসহ বহু ঘটনার নীরব সাী এ শহর। এই কুমিল্লা জেলার দৌলতপুরে সৈয়দা খাতুন নামে এক কিশোরীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। নাম রেখেছিলেন ‘নার্গিস’। ১৯২১ সালে নির্ধারিত বিয়ের দিনটিতেই তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। নার্গিসকে নিয়ে তিনি লিখেন ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই/কেন মনে রাখো তারে।’ এই শহরেই এখনো কবির অনেক স্মৃতি বহমান। নজরুলের স্ত্রী প্রমীলার বাড়িও এখানে। সেই হিসাবে কুমিল্লায় কবির জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান করা এবং প্রতিপাদ্য ‘কুমিল্লায় নজরুল’ বিশেষ তাৎপর্যময়। : বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই ধূমকেতুর মত। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কিভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে। কোন সঞ্জীবনী মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন বল বীর, বল উন্নত মম শির অথবা মহাবিদ্রোহী রণকান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দলরোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন মানবতার ও প্রেমের কবি। কখনো তিনি ছিলেন শান্তির বার্তাবাহক। তিনি পরাধীনতা, শোষণের কবল থেকে জাতিকে প্রথম স্বাধীন ও মুক্ত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। যার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল) দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন। এছাড়া ওই অঞ্চলের জনপ্রিয় লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে নজরুল নিয়মিত অংশ নিতেন। পরে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। : ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। তিনি ব্রিটিশ রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রত্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা : ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। এতে করে তাকে কারাবরণ করতে হয়। জেলে বন্দী হলে পরে লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন সকাল-সন্ধ্যায় মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’ কবির এ গানের কথা স্মরণে রেখে মৃত্যুর (১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র) পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তার সেই অন্তিম শয্যা ছেয়ে যাবে অগণিত অনুরাগীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, র্যালি, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, আবৃতি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লার দৌলতপুরে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তার লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। নজরুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন
জাতীয়কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ
সিলেট পোস্ট ২৪ ডট কম
: মে ২৫, ২০১৫ | ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
« « পূর্ববর্তী
পরবর্তী » »