সংবাদ শিরোনাম
ছাতকে বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে কন্ঠশিল্পী পাগল হাসান নিহত  » «   সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে মায়ের সম্পত্তি নিয়ে ছোটভাইয়ের হাতে বড়ভাই নিহত,আটক-২  » «   দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুইজন কৃষকের মৃত্যু  » «   পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান  » «   সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা  » «   ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র সভাপতি শেখ লুৎফুর  » «   পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ  » «   মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সুনামগঞ্জে কালবৈশাখীর ঝড়ে ৭শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি,২ শতাধিক দোকান লন্ডভন্ড  » «   হবিগঞ্জে চাল্যকর ছোবহান হত্যা মামলার ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯  » «   নবীগঞ্জে ৬ বছরে শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ! ধর্ষনকারী আনহারকে আটক   » «   ফ্যাসিস্ট ডামি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে :কাইয়ুম চৌধুরী  » «   বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সিলেট জেলার উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল  » «   সিলেটে পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের হাতে বাবা খুন  » «   সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  » «  

২১ বছর ধরে রোজা রেখে সঞ্জয় মিত্রের অভিনব

16সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট:   কলকাতার বাসিন্দা, ৭১ বছর বয়সী এক হিন্দু গত ২১ বছর ধরে রমজানের সময়ে রোজা রেখে চলেছেন। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এটা তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিবাদ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হিসাবে লজ্জাপ্রকাশ।

 

“সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের একজন মানুষ হয়ে কিছুতেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা মেনে নিতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করি যে আমি নিজেই প্রতিবাদ করব – এককভাবেই।“ অথচ এমন এক পরিবারের সন্তান সঞ্জয় মিত্র, যাঁদের বাড়িতে ১২৫ বছর ধরে দূর্গাপুজো হয়ে আসছে।

 

রমজানের এক বিকেলে মগরিবের নমাজ শুরু হওয়ার একটু আগেই বাড়ী থেকে জিনস্ আর খদ্দরের ফতুয়া গায়ে সেই বাড়ী থেকে বেরিয়েছিলাম মি. মিত্রর সঙ্গে। কলকাতার মুসলমান প্রধান এলাকা রাজাবাজারের ঠিক যেখানে হিন্দু পাড়া শেষ হয়ে শুরু হয়েছে মুসলমান মহল্লা সেখানেই একটা মাঝারি মাপের খাবার দোকানে ঢুকতেই সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হল।

 

17একটা টেবিলে বসতে বসতে মি. মিত্র বলছিলেন ইফতারটা বেশীরভাগ দিনই বাড়ীতেই করেন, তবে মাঝে মাঝে এই দোকানেও আসেন।“এই দোকানটায় আসছি প্রায় ৫৫ বছর ধরে। অনেক পাল্টে গেছে। এখানেই প্রথম গোরুর মাংস খেয়েছিলাম মনে আছে। আর তার পর থেকে তো নিয়মিতই খাই,” হাসতে হাসতে বলছিলেন মি. মিত্র।

 

কথা বলতে বলতেই পাশের মসজিদে শুরু হল মগরিবের নামাজ – আর ইফতার করে দীর্ঘদিনের চেনাপরিচিতদের সঙ্গে রোজা ভাঙ্গলেন সঞ্জয় মিত্র। দোকানের মালিক মুহম্মদ নঈমুদ্দিন, এক কর্মী মুহম্মদ জমিরুদ্দিনের সঙ্গে একই প্লেট থেকে কলা, পাকা পেপে, শশা, খেজুর আর তরমুজ খাচ্ছিলেন মি. মিত্র।

 

এই হিন্দু বন্ধুর রোজা রাখাতে একটু অবাক নন মি. নঈমুদ্দিন। তিনি বলছিলেন, “ প্রথম যখন শুনি যে মি. মিত্র রোজা রাখেন, শুনে খুব ভাল লেগেছিল যে একজন মুসলমানের মতোই তিনিও রোজা রাখেন। এরকম তো কোনও কথা নেই যে রোজা শুধু মুসলমানরাই রাখতে পারবে। সবাই রাখতে পারে। হিন্দুদেরও তো বিভিন্ন পুজোর দিনের উপোস থাকে। আর আমাদের এটা একমাসের উপোস – ব্যাপারটা তো একই।“

 

কখনও বাড়িতে ফল বা রুটি খেয়ে, কখনও বা হালিম খেয়ে গত একুশ বছর ধরে রোজা ভাঙ্গছেন সঞ্জয় মিত্র।

 

খাবারের দোকানে আসার আগে বাড়ীতে বসে মি. মিত্র বলছিলেন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে প্রতিবাদ হিসাবেই রমজান মাসে রোজা রাখতে শুরু করেন তিনি।

 

“বাবরি মসজিদের ঘটনা ৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তখন আমি দিল্লিতে থাকতাম। উত্তর ভারতে তো ওই ঘটনার পরের দাঙ্গা অনেক বেশী হয়েছিল, সেই সময়ে খুব অসহায় লাগছিল – হিন্দু হিসাবে। একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করি যে আমি নিজেই প্রতিবাদ করব – এককভাবেই,” বলছিলেন সঞ্জয় মিত্র।

 

যদিও নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না মি. মিত্র, তবে মুসলমানদের ধর্মাচরণের একটা অঙ্গ – রোজা রাখা নিয়ে স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাই বছরে আরও একটা মাস উপোস করেন তিনি – গ্রাম বাংলায় চৈত্র মাসের গাজনের সময়ে।

 

মি. মিত্রের কথায়, “কয়েক বছর রোজা রাখার পরে আমার স্ত্রী বলেছিলেন, তুমি মুসলমানদের মতো রোজা রাখ, কিন্তু নিজের ধর্মের জন্য তো কিছু কর না। তখন আমি বলি যে নমশূদ্র – যাঁরা বেশীরভাগই ভূমিহীন কৃষক, চৈত্র মাসে কোনও খাবার থাকে না বলে গাজনের নামে ভিক্ষা করে সন্ধ্যায় একবারই খায় – আমি সেটা করতে পারি। ভিক্ষাটা পারব না, কিন্তু গাজনের উপোস করি নিয়মিত। আমার উপোস রমজান আর গাজনের।“

 

নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না বলেই যেমন মন্দিরে যান না, তেমনই রমজান মাসে পাঁচ বার নমাজও পড়েন না একসময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আর মানবাধিকার কর্মী সঞ্জয় মিত্র। বছরের দুমাস উপোসের সময়ে তাঁর সঙ্গী বই আর গান।

 

বামপন্থী আন্দোলনে যখন যুক্ত ছিলেন, তখন যদিও দাঙ্গার সময়ে মুসলমান মহল্লায় গিয়ে সবাই মিলে রাত জেগে পাহাড়া দিয়েছেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে, তার প্রতিবাদটা তিনি একান্তই নিজস্ব ঢঙে করে চলেছেন – কারণ সেই ছোটবেলায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতিটাও তাঁর একান্তই নিজের।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.