সংবাদ শিরোনাম
সিলেট মহানগর কৃষকদলের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ  » «   ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: কয়েস লোদী  » «   ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় দেশের জনগণ অন্যায় ও জুলম থেকে মুক্তি পেয়েছেন-ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন  » «   নির্বাচন নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে: কাইয়ুম চৌধুরী  » «   সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা খুন  » «   মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটির দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সিলেট নগরীর গার্ডেন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের লিপ্ত থাকায় পাঁচ নারী ও এক পুরুষ আটক  » «   জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিএনপি জনগণের পাশে আছে : আব্দুর রাজ্জাক  » «   ৩০ বছর ধরে মিটাভারাং ও মজলিশপুরসহ অর্ধশত গ্রামের মানুষ একটি বাঁশ বেতের সেতু দিয়ে চলাচল করছেন  » «   ফ্যাসিসদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিই ধর্ষণের কারণ-কয়েস লোদী  » «   সিলেট মহানগর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আনন্দ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত  » «   দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসিম-কমিশনার রেজাউল করিম  » «   ফুটপাত দখলমুক্ত আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের সমর্থন, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি  » «   সিলেট মহানগর কৃষক দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  » «   ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে-কয়েস লোদী  » «  

এবার নিজামী

নিজামীসিলেটপোস্ট ডেস্ক : তিন বছরে চার যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের পর এখন বিচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে আরেক শীর্ষ অপরাধী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিজামীর আপিল বর্তমানে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আরও নয়জন যুদ্ধাপরাধীর আপিল আবেদন রয়েছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

আপিল বিভাগে শুনানি হওয়া যুদ্ধাপরাধ মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্রমানুসারে একটির শুনানি শেষ হলে পরেরটির শুনানি শুরু হয়েছে; অর্থাৎ যে রায়ের বিরুদ্ধে আগে আপিল হয়েছে, সেটির শুনানিই আগে হয়েছে।

এই ধারায় নিজামীর পরে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি হতে পারে।

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার।

কাজে গতি আনতে মাঝে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করা হলেও মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ায় চলতি বছর সেপ্টেম্বরে একটি বন্ধ করে দওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনাল থেকে এ পর্যন্ত ২১টি রায় এসেছে, যার মধ্যে চলতি বছর এসেছে ছয়টি।

এর বাইরে ছয়টি মামলা বিচারের পর্যায়ে এবং তিনটি তদন্ত শেষে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে যে ক’টি মামলার রায় এসেছে তার মধ্য থেকে ১৭টির বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে।এর মধ্যে চার যুদ্ধাপরাধীর আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তির পর ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।

এছাড়া আরেক যুদ্ধাপরাধীর মামলায় আপিল বিভাগে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় হলেও তার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ পর্যায়ে যায়নি।

এর আগে আপিল শুনানির পর্যায়ে এলেও মারা যাওয়ায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের আপিল ‘অকার্যকর’ হয়ে যায় এবং বাদ পড়ে।

নিষ্পত্তি , কার্যকর  

ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা সাতটি আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে এ পর্যন্ত।

এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে ওই বছর ১২ ডিসেম্বর দণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঠিক এক বছর পর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকলে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

সর্বশেষ আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকায় রিভিউ নিষ্পত্তির পর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় রোববার প্রথম প্রহরে।

চলতি বছর ১৬ জুন মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রেখে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। পরে ১৮ নভেম্বর তার সর্বোচ্চ সাজার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করা হয়।

একইদিন খারিজ হয় সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদনও। ২৯ জুলাই আপিল বিভাগ সাকার ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছিল।

শুনানি চলছে নিজামীর

ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে এখন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীর করা আবেদনের শুনানি চলছে।

গত ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ মামলার তৃতীয় দিনের শুনানি হয়।

বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল-১।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা প্রকাশ করেছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশের আগেই এই শুনানি শেষ হবে।

“আসামিপক্ষের বক্তব্যের পরে আমার বক্তব্য। আমি খুব বেশি সময় নেব না। তাতে শেষ না হলে বন্ধের পরে হবে।”

নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

নিজামী ছাড়া আরও নয় যুদ্ধাপরাধীর আপিল আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন, হবিগঞ্জের জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক ও আকরাম হোসেনের আপিল।

এছাড়া পিরোজপুরের পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল রয়েছে।

মীর কাসেম আলী: একাত্তরে চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে গত বছরের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে তার ফাঁসির রায় আসে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ২৮ মে আপিল বিভাগ আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের জন্য দুই পক্ষকে  চার সপ্তাহ সময় দেয়।

মোবারক হোসেন: ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আপিল করেন। গত বছরের ২৪ নভেম্বর মোবারককে ফাঁসির দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

সৈয়দ কায়সার: এরশাদ আমলের কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের ফাঁসির রায় আসে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে এ বছর ১৯ জানুয়ারি আপিল করেন তিনি।

টি এম আজহারুল ইসলাম: গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারুলকে ফাঁসির রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার।

আব্দুস সুবহান: এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে ১৮ মার্চ আপিল করেন জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান।

ইঞ্জিনিয়ার জব্বার: গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ পলাতক আব্দুল জব্বারকে ট্রাইব্যুনাল আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলে এর বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

মাহিদুর রহমান: চলতি বছরের ২০ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। মাহিদুর খালাস চেয়ে ১৭ জুন আপিল করলেও চুটু আপিল করেননি বলে জানান তাদের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

ফোরকান মল্লিক: গত ১৬ জুলাই পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের রাজাকার ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, যার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল জানান।

সিরাজআকরাম: চলতি বছরের ১১ অগাস্ট বাগেরহাটের রাজাকার নেতা শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে আকরাম আপিল করেছেন বলে তার আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম জানিয়েছেন। সিরাজ মাস্টারও আপিল করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর তাপস।

আপিল করেননি দণ্ডপ্রাপ্ত

চারটি যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক পাঁচ আসামি আপিল করেননি। এরা হলেন- ফরিদপুরের সাবেক জামায়াত নেতা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আলবদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান, ফরিদপুরের নগরকান্দার বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার সৈয়দ মো. হাসান আলী।

সিলেটপোস্ট২৪ডটকম/ফয়ছল আহমদ/২৩.১১.২০১৫

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.