সিলেটপোস্ট ডেস্ক::দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের বিভিন্ন শর্ত ভঙ্গ করায় সম্পত্তি হস্তান্তরের আইনি নোটিশ প্রদান করায় এক প্রবাসী উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সিলেটের করিম উল্লাহ মাকের্টের মালিক পক্ষ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে করিম উল্লাহ মার্কেটের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তারা।
মালিক পক্ষের দাবি, ওই প্রবাসী বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ছয়বার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া ছাড়াও জিডি ও মামলা দিয়ে তাদেরকে বারবার তদন্তের মুখোমুখি করছেন। এতে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়াও আদালতে চলমান দুটি মামলার বিষয়ে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণ করে যাচ্ছেন। এতে আদালত অবমাননাও করেছেন ওই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন করিম উল্লাহ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী ছানা উল্লাহ ফাহিম। তিনি বলেন, ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল করিম উল্লাহ্ মার্কেটের ২য় তলায় ৩৪ নম্বর দোকানটির ভাড়া বন্দোবস্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এসময় ৩১ টি শর্তাবলী পালন ও মেনে চলার জন্য আমরা উভয়পক্ষ অঙ্গীকরাবদ্ধ হয়। ওই দোকানটি প্রথমে মো. ফকরুল ইসলাম নামে একজনের কাছে ভাড়া দেন নাজমুল। পরে ফকরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ওই দোকানে ব্যবসা করেন। এ অবস্থায় নাজমূল ভার ভগ্নিপতি এমএস সাঈদ চৌধুরী বেলালকে দিয়ে ব্যবসা করাবেন বলে ফকরুল ইসলামের স্ত্রীকে দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। ফকরুলের স্ত্রী তার অসহায়ত্বের কথা বলে দোকানে থাকতে চাইলে আমিরুল ইসলাম সাহেব তাদের দ্বারস্থ হন এবং তারা ফকরুলের স্ত্রীকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল তাকে ফোন করে জানান, তার ভগ্নিপতি সাঈদ চৌধুরী বেলাল দোকান ভাড়া, বাড়িভাড়া সহ অন্যান্য সহায় সম্পত্তির আয় তাকে দিচ্ছেন না। বেলাল তাঁর বাড়ি ও দোকান অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছেন। তিনি তার ভয়ে দেশে আসতে পারছেন না। বিষয়টি প্রথমে এড়িয়ে গেলেও নাজমুলের বারবার অনুরোধের কারণে তিনি সমাধান করে দেন। নাজমুল ও তার ভগ্নিপতির মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে বসে সমাধান করে দেওয়া হয় এবং একটি আপোষনামা সম্পাদনের মাধ্যমে বেলাল দোকান ছেড়ে দিতে সম্মত হন। ভগ্নিপতি বেলালকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে নাজমুল তাকে একজন ভালো ভাড়াটে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, বেলাল দোকান ছেড়ে যাওয়ার আগেই নাজমুল তাকে না জানিয়ে একজন মোবাইল মেকানিককে (দিলদার হোসেন) দোকানটি ভাড়া দিয়ে দেন। বিষয়টি অবগত হওয়ার পরে নাজমুলের সাথে কথা বলে একজন ব্যবসায়ী ও মেকানিক দিলদার হোসেনকে একসাথে ব্যবসা করার ব্যববস্থা করে দেন ছানা উল্লাহ ফাহিম।
ছানা উল্লাহ ফাহিম বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় হঠাৎ একদিন পুলিশ তার বাড়িতে নোটিশ নিয়ে আসে। তখন তিনি জানতে পারেন আমিরুল ইসলাম নাজমুল যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধ একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের ব্যাখা দিতে তারা হাজিরা দিতে থাকেন। এরইমধ্যে নাজমুলের দোকানের মেকানিকের ভাই বিদেশ চলে যাওয়ায় তিনি দোকানের ডেকোরেশন মূল্য দোকানদার কবির আহমদের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা সমজিয়ে নিয়ে যান। এই বিষয়ে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল হাইকমিশনের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন। এসব অভিযোগ পুলিশের পাশাপাশি সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন।
ছানা উল্লাহ আরও বলেন, নাজমুল প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমাদের নামে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন এবং জমিদারী ভাড়া প্রদান বন্ধ রাখেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত দোকানের ভাড়া বকেয়া রাখেন। এছাড়াও বন্দোবস্থীয় চুক্তিপত্রের বিভিন্ন শর্তভঙ্গ করায় তারা ২০২১ সালের ৩১ মে নাজমুলের বরাবরে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১০৬ ধারায় লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন।
ছানা উল্লাহ বলেন, প্রবাসী আমিরুল বলছেন চেকের মাধ্যমে তাদেরকে ভাড়া প্রদান করেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত চেকের কপি ও ব্যাংক স্টেটম্যান্টসহ তথ্যপ্রমান তিনি দিতে পারেননি। তাছাড়াও আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন, যা এখনো বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তির আগে অন্যের হস্তক্ষেপ করার কিংবা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তাদেরকে অপদস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, নাজমুল একদিকে আদালতের দারস্থ হয়েছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন এবং মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ধরণের মিথ্য প্রচারণার মাধ্যমে তাদেরকে যাতে আর হয়রানী করা না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন করিম উল্লাহ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী কুদরত উল্লাহ ফাহের, আতা উল্লাহ সাকের, মার্কেটের ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পাভেল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিশু, সাবেক সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম ও কাওছার আহমদ প্রমুখ।