নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটপোস্ট২৪ডটকম : আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ২০০৫-২০১৪ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে (পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত) দুর্ঘটনায় ১২ হাজার ২৬০ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রতিরোধমূলক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে একত্রিত হই’ শীর্ষক সেমিনারে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ব পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ওশির সহকারী পরিচালক মো. ওমর ফারুক আইএলওর তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০১৪ (৯ বছর) সাল পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে (পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত) দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ হাজার ২৬০ শ্রমিক। আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ১৮৩ জন। মোট হতাহত হয়েছেন ২৯ হাজার ৪৪৩ শ্রমিক। ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে নিহত হয়েছেন আরও ২৮৮ শ্রমিক।
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ৪শ’ শ্রমিক। প্রতিবছর নিহত হন ২.৩ মিলিয়ন। এর মধ্যে ২ মিলিয়ন নিহত হন রোগে। নিরাপত্তার অভাবে ৩১৩ মিলিয়ন দুর্ঘটনা ঘটে। অসুস্থ হন ১৬০ মিলিয়ন। কর্মপরিবেশ ও দুর্ঘটনার কারণে বছরে বিশ্ব জিডিপির ৪ শতাংশ ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৮.৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের অবদান। সেখানেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে তদারকি নেই। অকুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ) আইন-২০১৩-এর বিধিমালা প্রণয়ন, শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বলেন, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা জরুরি। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ভবন, অগ্নি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য সরকার ও মালিক দায়ী। নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার বলেন, বাংলাদেশে পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন গার্মেন্টস খাত শ্রমিকরা। গার্মেন্টস খাত নিয়ন্ত্রণ না করায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, নিহত হচ্ছেন শ্রমিক। বিশেষ করে স্পেকটার্ম, তাজরীন। সর্বশেষ রানা প্লাজা।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ৭২ দিন পরই শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। কারখানা ও শ্রমিকের নিরাপত্তা মাথায় রেখেই বাড়ানো হয়েছে পরিদর্শন। শুধু গার্মেন্টস নয়, সব অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানেও পরিদর্শন বাড়ানো হয়েছে। পেশাগত নিরাপত্তা বিষয়ে সরকার খুবই সচেতন বলে জানান তিনি। সচিব আরও বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা শ্রমিকের অধিকার। এটা শুধু কারখানার মালিক নয়, শ্রমিককেও সচেতন হতে হবে।
ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকী রিজওয়ানার সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিসিআইসির পরিচালক (অব.) আবুল বাশার, বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি বোর্ড উপদেষ্টা প্রকৌশলী লুত্ফুল বারী প্রমুখ।