সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : ইউরোপ সেরার লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। ৩-০ গোলের এগ্রিগেটে এগিয়ে থেকে চলতি আসরের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে মাঠে নেমেছিল কাতালানরা। ফিরতি লেগের হাইভোল্টেজ এ ম্যাচে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ ৩-২ গোলের ব্যবধানে জয় পেলেও ৫-৩ গোলের এগ্রিগেটে ফাইনালে উঠে বার্সা। প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক বায়ার্নের দারুণ গতিতে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে অতিথি হিসেবে খেলতে নামা বার্সেলোনা। তাই দুই গোলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় স্প্যানিশ জায়ান্টদের। বার্সা কোচ লুইস এনরিক শুরু থেকে তার শিষ্যদের ৪-৩-৩ ফরমেটে খেলাতে থাকেন। শুরুর একাদশে এনরিক মাঠে নামান টার স্টেগেন, দানি আলভেজ, জেরার্ড পিকে, হাভিয়ের মাসচেরানো, জরদি আলবা, ইভান রেকিটিক, বাসকুয়েটস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, লিওনেল মেসি, নেইমার এবং লুইসকে সুয়ারেজকে। অপরদিকে স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নামা বায়ার্ন কোচ পেপ গার্দিওলা এ ম্যাচে শুরু থেকে তার শিষ্যদের ৪-৪-২ ফরমেটে খেলাতে থাকেন। বায়ার্নের হয়ে শুরুতে মাঠে নামেন ম্যানুয়েল ন্যুয়ের, রাফিনহা, বেনাতিয়া, বোয়েতাং, বার্নাট, ফিলিপ লাম, শোয়াইন্সটাইগার, জাবি অলোনসো, থিয়াগো, থমাস মুলার আর লেভানোডস্কি। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে লিড নেয় স্বাগতিক বায়ার্ন। ঘরের মাঠ অ্যালিনাজ অ্যারেনাতে বেনাতিয়ার গোলে এগিয়ে যায় গার্দিওলার শিষ্যরা। জাবি অলোনসোর তুলে মারা বলে বার্সার ডি-বক্সে বল পেয়ে হেড করেন বেনাতিয়া। কাতালান গোলরক্ষক টার স্টেগেন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। স্টেগেন হাতের নাগালে বল পেয়ে গেলেও জালের ঠিকানা খুঁজে নেয় বেনাতিয়ার হেডটি। ফলে, ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয় নি লা লিগার শীর্ষে থাকা বার্সা। খেলার ১৫ মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরে কাতালানরা। ‘এমএসএন’ খ্যাত বার্সার তিন দানব বলা হয় মেসি, সুয়ারেজ আর নেইমারকে। কেন বলা হয় তা হারে হারে টের পেয়েছে বায়ার্নের ডিফেন্সে আর গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ের। মেসির ডান পায়ের জাদুকরী এক পাস থেকে বায়ার্নের ডিফেন্স মাড়িয়ে বল পান সুয়ারেজ। লিভারপুলের সাবেক এ তারকা ডান পায়ের দারুণ এক পাস দেন নেইমারকে। আর বাম পায়ের আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন ব্রাজিল তারকা নেইমার। তবে, এর আগেই সুয়ারেজের ধোকাতে বোকা বনে যান ন্যুয়ের। ১৯ মিনিটের মাথায় আবারো আক্রমণ শানে স্বাগতিকরা। লামের এক দারুণ পাসে বল পান থমাস মুলার। তার জোড়ালো হেডটি অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন বার্সার গোলরক্ষক টার স্টেগেন। আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণে গড়ানো ম্যাচের ২৭তম মিনিটে লেভানোডস্কির একটি শট প্রতিহত করেন বার্সার গোলরক্ষক। পরের মিনিটে মেসির একটি জোড়ালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক। খেলার ২৯ মিনিটের মাথায় লিড নেয় বার্সা। এবারো মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার। নিজেদের সীমানা থেকে বল তুলে মারেন মেসি। লম্বা করে মারা সে বল পেয়ে যান সুয়ারেজ। আর নিজে গোল করার চেয়ে সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতে অতুলনীয় সুয়ারেজ বল বাড়িয়ে দেন নেইমারকে। এবারো জালে বল জড়াতে ভুল করেন নি নেইমার। বুকে বল নিয়ে ডানপায়ের জোড়ালো শটে গোল করেন ব্রাজিল অধিনায়ক। ফলে, বার্সা এগিয়ে যায় ২-১ গোলের ব্যবধানে।
খেলার ৩৮তম মিনিটে বার্সাকে আবারো রক্ষা করেন টার স্টেগেন। বার্নাটের দারুণ এক ক্রস থেকে হেড করেন শোয়াইন্সটাইগার। বার ছুঁইছুঁই করা শটটি রুখে দেন বার্সার গোলরক্ষক। এটাকে যদি বার্সার সৌভাগ্য বলা যায় তবে, পরের মিনিটে লেভানোডস্কির শটটি রুখে দেওয়াকে বলা চলে বায়ার্নের দুর্ভাগ্য। লেভানোডস্কির শটটি টার স্টেগেন প্রতিহত করলেও তা হাত ফসকে জালের ভেতরে যেতে থাকে। গোললাইনের দাগ থেকে আবারো ডাইভ দিয়ে বল ফিরিয়ে দেন স্টেগেন।
প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ২-১ গোলে আর ৫-১ এগ্রিগেটে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা। বিরতির পর সুয়ারেজের বদলি হিসেবে এনরিক মাঠে নামান গত সপ্তাহে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে গোল পাওয়া পেদ্রোকে। এর ফলে মেসিকে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং পজিশনে নিয়ে আসেন এনরিক। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে সমতায় ফেরে বায়ার্ন। বার্সার গোলরক্ষক স্টেগেনকে এবারে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডি-বক্স থেকে জোড়ালো শটে কাতালানদের জালে বল জড়িয়ে দেন লেভানডস্কি। তবে, তার আগে বাস্তিয়ান শোয়াইন্সটাইগার বলের যোগানদাতা হিসেবে সহায়তা করেন। এ গোলের পর ২-২ এ সমতা ফিরে আসে। খেলার ৭৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় বায়ার্ন। শোয়াইন্সটাইগারের অ্যাসিস্টে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোড়ালো শট নেন থমাস মুলার। টার স্টেগেনের হাতের নাগালের বাইরে দিয়ে বার্সার জালে বল জড়িয়ে গেলে ৩-২ এ লিড নেয় স্বাগতিকরা। ম্যাচের বাকি সময়ে কোনো দল আর গোলের দেখা না পেলে ৩-২ এ ম্যাচ জিতে নেয় পেপ গার্দিওলার বায়ার্ন মিউনিখ। তবে, দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ এগ্রিগেটে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকিট নিজেদের করে নেয় লুইস এনরিকের বার্সেলোনা। ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ আর জুভেন্টাসের মধ্যকার বিজয়ী (দুই লেগে মিলিয়ে) দলের বিপক্ষে ফাইনালের মাঠে নামবে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা।