সংবাদ শিরোনাম
কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরও ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু  » «   সিলেটে আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ  » «   আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত আপাতত ফেসবুকসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বন্ধ থাকবে-প্রতিমন্ত্রী পলক  » «   আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম নামে এক তরুণ নিহত  » «   কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের পক্ষে বিক্ষোভের ঘোষণা হেফাজতে ইসলামের  » «   আগামীকাল সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচি ঘোষণা  » «   দোয়ারাবাজারে প্রকাশ্যে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব! নিরব প্রশাসন  » «   মাদকের ভয়ালগ্রাস থেকে আমাদের সন্তানদের বাচাতে হবে- বিভাগীয় কমিশনার আহমদ ছিদ্দীকী  » «   আরিফ হত্যা মামলায় ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিপু কারাগারে  » «   ধর্মপাশার মুগরাইন হাওরে গোসল করতে নেমে ডুবে শাশুড়ি ও তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূর মৃত্য  » «   তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষজন  » «   বন্যায়ও থেমে নেই ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা চিনির চোরাচালান  » «   সিলেটে নতুন পুলিশ সুপার এর যোগদান  » «   র‌্যাব সদস্যরা দেশের যেকোন সংকটময় মূহুূর্তে সব সময়ই জনগনের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে -র‌্যাব মহাপরিচালক  » «   সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য একজন গানম্যান নিয়োগ পেলেন ব্যারিস্টার সুমন  » «  

মাঝপথে স্বপ্ন ভেঙে গেল

28সিলেট পোস্ট রিপোর্টউপজেলার প্রত্যন্ত হাতিলেট এলাকায় পরিবারটির বাস। অন্য দশটি গারো পরিবারের মতোই সাধারণ। মাটির দেয়াল আর টিনের চালার দুটি ঘর। পাঁচ মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার টানাপড়েনের সংসার। বাবা একটি বেসরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। মা গৃহিণী। পরিবারের পাঁচ মেয়ের বড় দুই জন এইচএসসি পাস করার পরই বাবাকে সাহায্য করতে কাজের খোঁজে আসেন ঢাকায়। নিজের পড়াশোনার খরচ যোগানো আর বোনদের মতো বাবাকে একটু আর্থিক সাহায্য করতে তিনিও এসেছিলেন ঢাকায় (গণধর্ষণের শিকার গারো তরুণী) রিবারটির আরেক মেয়ে কাজ করেন একটি মিশনারিতে। একজন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরিবারের ছোট সদস্যটি তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অভাব অনটনের সংসার হলেও শিক্ষার প্রতি অনুরাগী বাবা-মা সন্তানদের মানুষ করতে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তা মাঝ পথে ঝড়ের মতো এক আঘাত করলো দুর্বৃত্তদের আদিম লালসা। ভাগ্য বদলাতে এসে আদিবাসী তরুণীটি মুখোমুখি হয়েছে এক সর্বনাশা অভিজ্ঞতার।

গতকাল ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেট এলাকার সেই মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা মানসিক ও শারীরিকভাবে পুরেপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য গ্রামের লোকজন আসছেন বাড়িতে। কারও সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারছেন না। বাড়িতে অবস্থান করে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন, নির্যাতিতার এক মামা। তিনি মানবজমিনকে জানান, এই ঘটনার পর থেকে নির্যাতিতার মা নিয়মিত খাবার দাবার ছেড়ে দিয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। শুধু তার মা নন, পুরো গারো সম্প্রদায়কে ভাবিয়ে তুলেছে এ ঘটনা। উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গারো সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে।

এই ঘটনার বিচার চেয়ে নির্যাতিত তরুণীর প্রতিবেশীরা জানান, এর আগে আমাদের সম্প্রদায়ের উপর এ ধরনের তিনটি ঘটনা ঘটেছে। কোনটির বিচার হয়নি। এবার আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইতে চলতি সপ্তাহে ফুলবাড়িয়ায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে মানববন্ধন করার কথাও জানান তারা। দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা। গারো আদিবাসী সদস্যরা অভিযোগ করেন, আত্মীয়স্বজন, সন্তানদের নিয়ে তারা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। পেশা ও পড়াশুনার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন এ সম্প্রদায়ের লোকজন।

নির্যাতিতার মামা জানান, ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য ২০১৩ সালে ঢাকায় যান নির্যাতিত সেই তরুণী। ওই বছর এইচএসসি পাস করার পর ময়মনসিংহের আবুল মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। এর আগে ২০১১ সালে হাতিলেট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পাঁচ বোনের মধ্যে নির্যাতিতা চতুর্থ। বড় তিন বোনের মধ্যে সবার বড় বোন এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় একটি বিউটি পার্লারে কাজ নেন। দ্বিতীয় বোন কাজ করেন একটি মিশনারিতে। নির্যাতিত  তরুণী বড় বোনের সঙ্গে থাকেন ঢাকার উত্তরায়। সেখানে তাদের এক খালাও থাকেন।

গত ২০শে এপ্রিল নির্যাতিত তরুণী ঢাকায় যান। এর আগে তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম কাজ করতেন। যমুনা ফিউচার পার্কে কাজে যোগ দেয়ার আগে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন আড়াই মাস।

নির্যাতিতার মামা জানান, ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে ফোনে ঘটনার কথা শুনতে পান তারা। এরপর থেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন নির্যাতিতার মা-বাবা। খবর শোনে মেয়েকে দেখতে ঢাকা গেছেন বাবা। গ্রামের বাড়িতে আগে কৃষিজমিতে কাজ করতো এই গারো পরিবারের কর্তা। এক বছর আগে ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি কলেজে চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি পান তিনি।

নির্যাতিত তরুণীর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারের পাঁচ মেয়েই খুব মেধাবী। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। বাবা-মা কষ্ট করে তাদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। সংসারে টানাপড়েন থাকলেও সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাদের কোন কার্পণ্য নেই। গতকাল দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার গারো লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। তারা নির্যাতিত তরুণীর মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ঘটনার চার দিন পরও ধর্ষকদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় তাদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গারো সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষক বলেন, এ ঘটনার যেমন পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছে, তেমনি আমাদের হতবাক করেছে। এর প্রতিবাদ করা ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। আমাদের সন্তানরা পড়াশুনা, চাকরি করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। তাদের নিয়ে আমরা ভীষণ  চিন্তিত। তিনি বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি না হলে এমন ঘটনা বারবার ঘটবে। গারো তরুণীকে ধর্ষণের খবরটি স্থানীয় রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার সুরুজ চৌধুরী জানেন না বলে জানিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে মানবজমিনকে তিনি বলেন, এ খবরটি আমি শুনিনি। তবে গারো সম্প্রদায়ের কারও কোন সমস্যা হলে আমি তাদের পাশে থাকবো।  ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাস  বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। গারো সম্প্রদায়ের কেউ যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন এবং প্রশাসনের সহায়তা চান আমরা সহযোগিতা করবো।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.