মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥ বাংলা ট্রিবিউনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিকে নির্যাতনের ঘটনায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট মোহাম্মদ জুলফিকার আলীর আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল, উপ-পরিদর্শক (এসআই) গিয়াস উদ্দিন, এসআই জাকির হোসেন, এসআই মাসুদ, ট্রফিক সার্জেন্ট মাহফুজ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বাশার।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করে আগামী ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী রুমী বেগম উল্লেখ করেন, তার স্বামী সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম দৈনিক জনতা, বাংলা ট্রিবিউন ও সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়ির দেশ পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন সময় শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেন। এর জের ধরে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুল জলিল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
রুমি বেগম আরও উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে ওসি বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে হুমকি দেন। তিনি তাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন তার লেখা অব্যাহত থাকলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখবেন ও পুলিশ রিমান্ডে এনে উচিৎ শিক্ষা দেবেন।
সাইফুলের স্বজনদের অভিযোগ, ২৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের রুপসাপুরের বাসা থেকে সাইফুল ইসলাম বের হয়ে পূর্বাশা এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে শহরের ক্যাথলিক মিশন রোড এলাকায় পৌঁছালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ তাকে পেছন দিক থেকে জাপটে ধরেন। সাইফুল অপহরণকারী অথবা ছিনতাইকারী ভেবে আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করেন এবং তাদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তার সঙ্গে ল্যাপটপ, নগদ ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুল জলিলসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যের চিনতে পারেন। সেখান থেকে তাকে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, ওই রাতেই ওসি আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে চোখ বেঁধে তারই কক্ষে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে থানা হাজতেও তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে সাইফুলের হাত পা ও কোমর থেতলে যায়। পরবর্তীতে তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ও পরে সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি অত্যাচার ও নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে আছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল আবেদীন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।