সংবাদ শিরোনাম
তারেক রহমানের খালাসের খবরে সিলেটে আনন্দ মিছিল  » «   সিলেটে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি’র উদ্যোগে মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত  » «   কুলাউড়ায় মানব পাচারকারীর বাড়িতে বিজিবির অভিযান,আটক-৮  » «   চিনিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি আলোচিত অঞ্চল সিলেট  » «   বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে: কয়েস লোদী  » «   এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই  » «   জাদুকাটায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনি-আনার জব্দ  » «   সিলেট বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত! ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নিতে উভয়েই এখন মরিয়া  » «   যেকোন মূল্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখব : তারেক রহমান  » «   সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও পুলিশী হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই-সংবাদ সম্মেলনে রাসেল রবি  » «   ফসল রক্ষা বাঁধের বরাদ্দের নামে অহেতুককোন প্রকল্প নেয়া হবে না- উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান  » «   গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে আছে সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতারা :কার্যক্রম নিরব  » «   সিলেট সীমান্তে (১৯ বিজিবি) প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকার চোরাই পণ্যসহ ২ জনকে আটক  » «   স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে-কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন  » «   অন্তরবর্তীকালীন সরকার এক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালে জনগণের আস্থা ও সমর্থন হারাবে-শায়খ জিয়া উদ্দীন  » «  

‘মুল্লুক চলো’- রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

abulআবুল হুসেন চৌধুরী:শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন আর অধিকারহীন দাসত্বময় জীবন-যাপনের নির্মমতা থেকে মুক্তির লড়াইয়ের এক গৌরবময় রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাসের দিন ২০ মে। ৯৪ বছর আগে চা শ্রমিকরা শাসকের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে অমর করে গেছেন এই দিনটি। পূর্বপুরুষদের সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে চা শ্রমিকরা ‘মুল্লুক চলো’ অভিযাত্রাকে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়, শপথ নিচ্ছে মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠার।
জানা গেছে, উনবিংশ শতাব্দির প্রথম ভাগে ভারতে চা শিল্পের সূচনার মধ্য দিয়ে ভারত বর্ষে নতুন এক বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচত হয়ে। সে ধারাবাহিকতায় ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর সাথে সাথে ব্রিটিশরা চায়ের লাভ ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে খুব দ্রুত চা বাগানের সংখ্যা বাড়াতে থাকে। তখন প্রচুর সংখ্যক চা শ্রমিকর চাহিদা দেখা দেয়। সেই শ্রমিক চাহিদার যোগান দিতে ব্রিটিশ বাগান মালিকরা দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের অনুর্বর ও দারিদ্রপীড়িত অঞ্চল উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, মিজোরামসহ আশপাশের এলাকা থেকে অভাবপীড়িত হাজার হাজার কৃষক-মজুরদের ‘গাছে ঝাঁকি দিলে টাকা পড়ে’ আর ‘কোদাল দিয়ে কোপ দিলে সোনা বেরোয়!’ এমন মিথ্যা প্রতিশ্র“তি দিয়ে এদেশে এনে ছেড়ে দেয় গহীণ অরণ্যে। সেই থেকে চা শ্রমিকদের নিপীড়ন আর বঞ্চনার ইতিহাস শুরু। ৯৪ বছর পর আজো চা শ্রমিকরা পূর্বপুরুষের আত্মদানে কি পেয়েছেন, সে প্রশ্নের জবাব খুজে পান না!
তৎকালীণ সময়ে শুধু বাগান মালিক নয়, অসহায় ও বঞ্চিত এসব চা শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শোষণ করতে তৈরী হয় ‘ওয়ার্ক ম্যান্স ব্রিচ অব কনট্রাক্ট অ্যাক্ট’ নামে একটি অমানবিক আইন। যে আইনে বলা হয় কোন চা শ্রমিক চুক্তি ভঙ্গ করে বাগান থেকে চলে যেতে চাইলে, তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই নয়, চা শ্রমিকদের গ্রেফতারের অধিকারও বাগান মালিকদের দিয়ে ছিলো সে আইন। তাই আজো চা শ্রমিকরা নিজের মাটিতে নিজেদের পরাধীন মনে করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে চা শ্রমিকরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু আজো কি আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। আমাদের নিজস্ব ভূমি অধিকার নেই, নেই বেতন কাঠামো। আমাদের শ্রমিকরা দৈনিক ৬৯ টাকা মজুরী পায়। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরে যে মজুরী দেওয়া হয় তার ধারেকাছেও আমাদের মজুরী নয়। আমরা মজুরী ৩শ টাকার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
মালনীছড়া চা বাগানের রাগীব-রাবেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হৃদেশ মুদি জানান, এখানকার শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ৬৯ টাকার মজুরী দিয়ে সংসার চালানো যেখানে দায় সেখানে সন্তানের লেখাপড়া অনেক চা বাগানে আজো স্বপ্ন।
শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশন, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সুশান্ত সিনহা সুমন বলেন, জঘন্য কালো আইন আর দাসত্বে চা শ্রমিকদের জীবন যখন ওষ্ঠাগত তখন তারা ‘মুল্লক চলো’-এর ডাক দিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী ১৯২১ সালের ২০ মে প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক রেলপথ ধরে পায়ে হেঁটে চাঁদপুরের মেঘনা ঘাটে পৌঁছে। এ ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন পন্ডিত দেওশরণ ও পন্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিত। মেঘনা ঘাটে পৌছার সাথে সাথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্রিটিশের গোর্খা সেনা। এসময় চা শ্রমিকরা বিদ্রোহ করলে গোর্খা সেনারা নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে কয়েক শ’ চা শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। লাশ যাতে পানিতে ভেসে না উঠে সেজন্য গোর্খা সেনারা চা শ্রমিকদের পেঠ কেটে নদীতে ডুবিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক বীরেণ সিং বলেন, ২০শে মে’র চেতনা নিয়ে ‘চা শ্রমিক দিবসের’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, ভূমির স্থায়ী মালিকানা, প্রতিটি বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণ করা এবং দৈনিক মজুরী ৩শ’ টাকায় উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবী নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করে যাচ্ছি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.