সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট : দেশের মুক্তচিন্তার মানুষগুলো ভয়াবহ বিপদের মধ্যে আছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম। বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে সংস্থাটি। হিউম্যান রাইটস ফোরাম ১৯টি মানবাধিকার সংগঠনের সমষ্টি। ফোরামের পক্ষ থেকে মহিলা পরিষদের চেয়ারপারসন আয়শা খানমের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী জাকির হোসেন, ব্লাস্টের পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন প্রমুখ।
আয়শা খানম বলেন, ‘যেভাবে দেশের মুক্তচিন্তার যুব সমাজকে প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গিগোষ্ঠি হত্যা করছে, তা চরম উদ্বেগজনক। সরকার এই দায় এড়াতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের মধ্য দিয়ে প্রথম ব্লগার বা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যারা মুক্ত চিন্তার ধারক। অথচ হেফাজতে ইসলাম নামে একটি দল তাদের নাস্তিক বলে প্রচার করে চরম ধংসলীলা চালায়। সরকার তাদের সঙ্গে চুক্তি করে ব্লগারদের ৮৪ জনের তালিকা করে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ম এবং মহানবীকে (সা.) অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। মূলতঃ এরই মধ্য দিয়ে সরকার ওই ৮৪ জন মুক্তচিন্তার যুবককে জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক তালিকা ধরে তাদের খুন করে চলেছে জঙ্গিগোষ্ঠি।’
আয়শা খানম এসব হত্যাকা- বন্ধে সরকারকে আরো কঠিন হওয়ার আহ্বান জানান। নয়তো এর দায় একদিন গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে তাদেরই বহন করতে হবে বলে সতর্ক করে দেন।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘যেসব আইন বহির্ভূত হত্যাকা- ঘটছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। সরকারের অপরিণামদর্শিতার কারণে এভাবে ব্লগারদের জীবন দিতে হচ্ছে, এর প্রভাব শুধু দেশে নয়, বিদেশেও মানবাধিকার পরিস্থিতেতে বাংলাদেশের অবস্থান বিরূপ ভাবাপন্ন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের নাস্তিক বলে হত্যা করা হচ্ছে, তা কতটুকু আইন সম্মত। সংবিধান এবং মানবাধিকারে এ বিষয়ে কী ব্যাখা রয়েছে। সরকারের বাহিনীগুলোও এসব হত্যাকা-ের তদন্তে নিরব ভূমিকায় রয়েছে। যে কারণে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন।’
ব্যারিস্টার সারা হোসেন মুক্ত চিন্তার মানুষদের এই বিচার বহির্ভূত গুম এবং খুনের বিচারের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের দাবি তোলেন।
জাকির হোসেন বলেন, ‘যেভাবে তরুণ ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, রীতিমতো ভয়ঙ্কর। কারণ তরুণ সমাজ তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যে ধীর গতিতে এই সব হত্যাকা-ের বিচার চলছে, নাস্তিকতার দোহাই দিয়ে তরুণদের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি করা হচ্ছে, তা সরকারের রাজনৈতিক কমিটমেন্টের বিরুদ্ধাবস্থান। এতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। মানুষ তাদের মতামত প্রকাশে ভীত হয়ে পড়বে। এই সুযোগে বাড়বে জঙ্গি ও প্রতিক্রিয়াশীলদের দাপট।’ তিনি এজন্য সরকারকে কঠোরভাবে ব্লগারদের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
ইতিমধ্যে ব্লগার ও লেখক রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস খুন হয়েছেন প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গিগোষ্ঠির হাতে। এসব খুনিদের সনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম।