সিলেটপোস্ট২৪রিপোর্ট :জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার গোপন অডিও ফাঁস হওয়ায় সোমবার ক্যাম্পাসে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অডিওতে প্রক্টর ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এঘটনায় প্রক্টরকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে ফার্মেসি বিভাগের রজত জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল আলম। এ সময় তাঁর বন্ধু ৪৪তম ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদসহ ৬/৭জন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলেন। তারা মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী। পরে একই (ফার্মেসী) বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্র মহিদুর রহমান রাসেল সেখানে উপস্থিত হয়ে মাইদুলকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন। মাইদুল গাড়ি থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানালে রাসেল লোহার চেইন দিয়ে তার কোমরে আঘাত করে। এ সময় মাইদুলের বন্ধুরা এগিয়ে এলে মহিদুর কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন।
এ ঘটনার বিচারের দাবিতে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রায় ৪০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এসে জড়ো হয়। পরে তারা ফার্মেসী বিভাগের সভাপতি সুকল্যাণ কুমার কুন্ডুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। কিন্তু সভাপতি ঘটনাটি (ফাঁকা গুলি ছোড়া) অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে ঘটেছে বলে জানিয়ে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাতে বলেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বশিরুল হক মুঠোফোনে প্রক্টরের কাছে এ ঘটনার প্রতিকার চান। কিন্তু প্রক্টরকে ফার্মেসী বিভাগের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় তিনি এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না বলে জানান। পরে প্রক্টরের সঙ্গে কথোপকথনের ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের অডিওটি বশিরুল ফাঁস করেন। ওই অডিও হতে জানা যায়, প্রক্টর: ‘চেয়ারম্যানকে (ফার্মেসী বিভাগের সভাপতি) ভালোমতো ধরো। একেবারে ধরো।’ বশির: (বশির ফার্মেসী বিভাগের সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রক্টরকে বলেন), ‘স্যার উনিতো আপনার ওপর দায়িত্ব ছাইড়া দিছে। উনি বলছে গোলাগুলি হইছে বাইরে (অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে), এই দায়িত্ব আমি নিব কেন? ক্যাম্পাস প্রাশাসনের দায়িত্ব ক্যাম্পাস সেইভ (রক্ষা) রাখা।’
প্রক্টর: ‘বলো যে, অনুষ্ঠান করছেন, আপনি কি তারে (প্রক্টর) জানাইছেন? বলছেন? না প্রক্টররে দাওয়াত দিছেন?’
বশির: ‘উনিতো (ফার্মেসী বিভাগের সভাপতি) দায়িত্ব নিতে চাইছে না, উনি বলছে, এর সম্পূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব হচ্ছে আপনার।’
প্রক্টর: ‘কিচ্ছু দায়িত্ব না, ওরে (সভাপতিকে) ধরে আটকাইয়া থোও (রাখো) ওখানে। বসে থাকো। বলো যে, এর বিচার না হইলে আমরা উঠবো না।’
অডিও ক্লিপে প্রক্টর ও ছাত্রলীগ নেতার এই কথোপকথনে প্রক্টরের বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ ও ‘দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবেই দেখছেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র কয়েকজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় তার দ্রুত অপসারণ দাবি করে বলেন, ‘প্রক্টরের এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য হতেই ক্যাম্পাসের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে তার একটা চিত্র পাওয়া যায়। তার কাছে কোন শিক্ষক নিরাপদ নয়। তার এ বক্তব্য শুধু দায়িত্বহীনতায় নয়, অশিক্ষকসুলভও।’
প্রক্টরের এ বক্তব্যকে বিব্রতকর দাবি করে দ্ইু সহকারী প্রক্টর বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে প্রক্টরের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া অনুচিৎ।
এ বিষয়ে আওয়ামীপন্থী অপর এক শিক্ষক বলেন, ‘দাওয়াত না পেয়ে এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করায় তিনি তার (প্রক্টর) নৈতিক অবস্থানে নেই। এতে তার পদত্যাগ করা উচিত। প্রশাসনের উচিৎ তাকে অপসারণ করা।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, আমার বক্তব্যে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলনা।
এ বিষয়ে মহিদুর রহমান রাসেল বলেন, আমি নিয়মিত ক্যাম্পাসে থাকি না। সপ্তাহে দুই দিন আসি মাস্ট্রার্স কোর্স করার জন্য। সে দিন এসেছিলাম বিভাগের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু আমাকে কেন এই ঝামেলায় জড়ানো হল বুঝতে পারছি না।
এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ফার্মেসী বিভাগে এক জরুরি সভা করেন শিক্ষকরা। সভায় উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সাপেক্ষে বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান রজত জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক সাকিনা সুলতানা। তবে রোববার উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি ফোন বেক করেননি বলে জানান ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষকরা। সোমবারও শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি বলে জানান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু।